শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

সমাজ রীতিতে পিষ্ট ‘সুন্নতি বিয়ে’

সমাজ রীতিতে পিষ্ট ‘সুন্নতি বিয়ে’

স্বদেশ ডেস্ক:

বৈধভাবে জীবনযাপনের পথটা যখন সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়, মানুষ তখন অবৈধভাবে চলার পথ খুঁজে নেয়। সহজ কোনো বিষয়কে যখন প্রচলিত সমাজব্যবস্থা কঠিন করে উপস্থাপন করে, কঠিনের মোকাবেলা করতে না পারা মানুষগুলো তখন সহজ কোনো পথের সন্ধানে নেমে পড়ে। ফিলহাল যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় রুখতে অত্যাবশকীয় কিন্তু কঠিন হিসেবে উপস্থাপন করা একটি বিষয় হলো বিয়ে।

যিনি শরিয়ত প্রণেতা, তার পক্ষ থেকে বাতলে দেয়া সহজ একটি বিষয়কে সমাজব্যবস্থা নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছে। ফলে মানুষের জৈবিক চাহিদা মেটানোর বৈধ যে পন্থা বিয়ে, সেটি মানুষের সামনে ‘টাকা-পয়সার এলাহি কারবার’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সমাজের বেঁধে দেয়া এ নিয়মের কাছেই মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে শত শত বিয়ে উপযোগী যুবক-যুবতী ও তাদের পরিবার। পক্ষান্তরে, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা এখন মুড়িমুড়কির মতোই সহজলভ্য। ফলে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়ছে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে। চারিত্রিক অবক্ষয়ের চরম দুর্দিনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সমাজ। অবৈধ প্রণয়, লিভ টুগেদারসহ নানা অপরাধকে একপ্রকার বৈধ জেনেই করে যাচ্ছে অবলীলায়।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যা কিছু হারাম; এসবে মানুষ এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, এখন এসবকে গুনাহ মানতেও দিল সায় দেয় না। পরনারীর প্রতি দৃষ্টিপাত সম্পর্কে আল্লাহর অমোঘ বাণী হলো- ‘মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (আন নূর-৩০) ‘মুমিনা নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সূরা আন নূর-৩১)

কিন্তু পর্দার এ বিধানটি লঙ্ঘিত হতে হতে এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, বেগানা কাউকে দেখা হারাম, এটি কোনো আকল এখন আর গ্রহণ করতে চায় না। অথচ পুরো জাতি যদি কোনো বিধানের বিপরীতে কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবুও আল্লাহর বিধান কিয়ামত পর্যন্ত তার আপন স্থানে বহাল থাকবে।

বিয়ে কেবল জৈবিক চাহিদা মেটানোর মাধ্যমই নয়; বরং সব নবীর সুন্নত। এ সম্পর্কে আল্লাহর বাণী হলো- ‘তোমার পূর্বে আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম।’ (সূরা রা’দ-৩৮) রাসূল সা: বলেন, ‘আমি নারীদের বিয়ে করি (সুতরাং বিয়ে করা আমার সুন্নত)। অতএব যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে আমার দলভুক্ত নয়’। (বুখারি ও মুসলিম) সৃষ্টির মহান কারিগর আল্লাহ জাল্লে শানুহু মানবজাতির সৃষ্টির সূচনাকালেই তাদের ভেতরে বুনে দিয়েছেন ভালোবাসার বীজ। বানিয়েছেন দু’টি ভিন্ন অবয়বে। কেবল মানুষই নয়, মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো- ‘আর প্রত্যেক বস্তু আমি সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা আজ-জারিয়াত-৪৯) ‘এমনকি লতাপাতা, গাছ-পালাও।’ (সূরা ইয়াসিন-৩৬) ‘তেমনি মহান আল্লাহ মানুষকেও দু’টি ভাগে তথা নারী-পুরুষে বিভক্ত করেছেন।’ (সূরা হুজুরাত-১৩, নিসা-১) একে অপরের প্রতি আকর্ষণীয় করে দিয়েছেন। ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন, বসবাস ও জৈবিক চাহিদা পূরণের একমাত্র পন্থা হিসেবে বিয়ের প্রচলন করা হয়েছে। এ জন্য প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের অধীনস্থদের বিয়ের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্বামীহীন তাদের বিয়ে সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও।’ (সূরা নূর-৩২)

ঠিক তার পরের অংশেই যারা আর্থিক টানাপড়েনের কথা ভেবে বিয়ে থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলছেন, ‘যদি তারা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে সম্পদশালী করে দেবেন।’ (সূরা নূর-৩২) রাসূল সা: থেকেও আল্লাহর সাহায্যের ব্যাপারটি ঘোষিত হয়েছে যে, হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের ওপর আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে- তার মধ্যে একটি হলো যে লোক বিয়ে করে নিজের নৈতিক পবিত্রতা রক্ষা করতে চায়।’ (নাসায়ি-৩২১৮) আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে আশ্বাসবাণী পেয়েও কেউ এটিকে কেবল কথার কথা ভেবে ভ্রƒক্ষেপ করছে না। পরিপূর্ণ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও আরেক শ্রেণী অযথাই বিলম্ব করে, অধীনস্থদের বিয়ের ব্যাপারে। অথচ হাদিস শরিফে হজরত আবু সাঈদ ও ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- যার ভাবার্থ হলো- যখন কারো সন্তান জন্ম নেয়, তখন যেন সে তার সুন্দর নাম রাখে এবং যখন প্রাপ্তবয়সে উপনীত হয়, তখন যেন বিয়ে করিয়ে দেয়। আর যদি প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হয় এবং বিয়ে না করায়, অতঃপর কোনো পাপে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে ওই পাপের ভার তার পিতার ওপরও আসবে।

সাদামাটা বিয়ের ব্যাপারে হজরত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘স্বল্প খরচের বিয়ে সর্বাপেক্ষা বরকতময়’। রাসূল সা: নিজের প্রাণাধিক প্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমা রা:-কে একটি ‘ঢাল’-এর বিনিময়ে চালচুলোহীন হজরত আলী রা:-এর কাছে বিয়ে দেয়ার মাধ্যমে বিয়ে কতটা সহজ হতে পারে সেটিই যেন উম্মতকে বুঝিয়ে গেলেন। কিন্তু নির্বোধ উম্মত আমরা এখনো বিজাতীয় সংস্কৃতিকে পেলেপুষে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুঠার ঠুকিয়ে যাচ্ছি সদাসর্বদা। রাসূল সা:-এর বিয়ে পদ্ধতিও আমাদের জন্য আদর্শ হতে পারেনি। বিয়ের সহজ ও সুন্নত পদ্ধতি থেকে সরে গিয়ে গ্রহণ করেছি এমনই এক রীতিনীতি, যেখানে মেয়ে বিয়ের অর্থই হচ্ছে কয়েক লাখ টাকার হিসাব-নিকাশ নিয়ে মাঠে নামা। ছেলেকে বিয়ে করাতে হলেও টাকার প্রশ্ন প্রথমই উঠে আসে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বিয়ের পুরো কাঠামো টাকা নামক পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। টাকা নেই, তখন তুমি বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে অন্য কথা ভাবো।

বর্তমান সময়ে যুবসমাজে চলতে থাকা নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে বিয়েটা একমাত্র সমাধান না হলেও অনেকাংশেই কার্যকর হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ক্যারিয়ার বাংলাদেশ সাহিত্য ও সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877